রশিদ খান বিয়ে কবে করছেন—এটা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই চলছিল আলাপ-আলোচনা। অবশেষে ক্রিকেটপ্রেমীদের সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। শুভ কাজটা গতকাল সেরেই ফেললেন আফগান এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার। একই দিনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন তাঁর তিন ভাইও।
২০২৪ সালটা যেন আফগানিস্তানের জন্য ইতিহাস গড়ার। কয়েক মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি ইভেন্টে সেমিফাইনাল খেলে আফগানরা। ‘জায়ান্ট কিলারের’ তকমা পাওয়া আফগানদের এবারের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র ১৫ বছরের পথচলা আফগানিস্তানের। এরই মধ্যে আফগানরা ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ জাগানিয়া এক দলে পরিণত হয়েছে। তবে ঘরের মাঠে একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়নি আফগানদের। রশিদ খানদের সেই আক্ষেপ শিগগিরই ঘুচবে বলে আশা আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি)।
ইংল্যান্ডের ১০০ বলের টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেডের’ শেষের দিকে সময়টা ভালো যাচ্ছে না রশিদ খানের। কাইরন পোলার্ডের কাছে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন রশিদ। এবার টুর্নামেন্টই শেষ হয়ে গেল রশিদের।
সাউদাম্পটনে গত রাতের ঘটনা যে চাইলেও ভুলতে পারবেন না রশিদ খান। আফগান লেগ স্পিনারকে দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিয়েছেন কাইরন পোলার্ড। পাঁচ ছক্কা হজম করে বিব্রতকর রেকর্ডে নাম উঠে গেছে রশিদের।
সেমিফাইনালে উঠতে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকেই যে ‘পাখির চোখ’ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত আফগানরা জেতায় অস্ট্রেলিয়ার বিদায় নিশ্চিত হয় সুপার এইটে। ডেভিড ওয়ার্নারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলাও থেমে গেছে এখানেই।
জহুরির চোখ বোধ হয় এমনই। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে আফগানিস্তানে সেমিফাইনালে রেখেছিলেন ব্রায়ান লারা। সেই লারার কথা সত্যি প্রমাণিত হলো আজ আফগানরা জয়ের পর। এমন প্রতিশ্রুতি টুর্নামেন্টের মাঝপথেই লারাকে দিয়েছিলেন রশিদ খান।
ছয় অলরাউন্ডার রেখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। ১৫ সদস্যের দলে ৮ জনই এবার খেলছেন আইপিএলে। দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণও গড়েছে তারা। পাশাপাশি পেস বোলিং আক্রমণেও আছে দারুণ সমন্বয়।
১৫৬ রানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য তাড়ায় আয়ারল্যান্ড অলআউট ৯৮ রানে। এই হারে আফগানিস্তানের হাতে সিরিজও তুলে দিল আইরিশরা। ৫৭ রানের জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল আফগানরা।
টি-টোয়েন্টির অন্যতম ‘হটকেক’ রশিদ খান। তবে গত ছয় মাস ধরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি দূরে থাক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও তিনি নেই। টি-টোয়েন্টিতে ফেরার অপেক্ষা তার বেড়েই চলেছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ বাতিল করায় বিগ ব্যাশ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন রশিদ খান। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার। তবে সরে আসার পরও কাজ হলো না।
আফগানিস্তানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ইনিংসের পার্থক্য হয়ে থাকল শুরু আর শেষের। টেস্টের ‘বাজবল’ প্রবর্তকদের বিপক্ষে শুরুতে যে ঝড় তুললেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মার্ক উড-রিস টপলিরা। ১৩ ওভারেই আফগানরা পার করে ফেলে ১০০।
রশিদ খান সজোরে মারতে চেয়েছিলেন তাসকিন আহমেদকে। সেটি তো হয়ইনি, উল্টো সাকিবের ক্যাচে পরিণত করে রশিদ ফিরেছেন হতাশ মুখে। আফগানদের শেষ উইকেট রশিদকে ফিরিয়েই তাসকিন হাত দিয়ে কিছু একটা বুঝিয়েছিলেন।
বাঁচা-মরার ম্যাচে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে, সময়ই বলে দেবে। মাঠের লড়াইয়ে অবশ্য কেউ কাউকে এক বিন্দু ছাড় দেওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের সামনে ‘জিততেই হবে’ সমীকরণ। আর আফগানরা এশিয়া কাপ অভিযান জয় দিয়ে শুরু করতে চাইবে।
বছরের শুরুতে বিগ ব্যাশ বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন রশিদ খান। কিন্তু নতুন সংস্করণ শুরুর আগে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু বলেননি তিনি।
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজকে ‘রেইনি সিরিজ’ বললেও ভুল বলা হবে না। দুটি ম্যাচেই হানা দিয়েছে বেরসিক বৃষ্টি। টি-টোয়েন্টি সিরিজও হেরেছে আফগানিস্তান। তবে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান বৃষ্টি নিয়ে কোনো অজুহাত দিতে চান না।
এবারের আইপিএলে গুজরাট টাইটানস চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও দুর্দান্ত খেলেছেন রশিদ খান। ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স করেছেন তিনি। সেই ছন্দ নিশ্চয়ই জাতীয় দলে ধরে রাখার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু আফগানিস্তানের হয়ে মাঠে নামার আগেই দুঃসংবাদ পেয়েছেন লেগ স্পিনার।